৳ 350.00
৳350.00
বাংলার মিষ্টান্নের জগতে ‘বগুরার দই’ এমন একটি নাম, যা শুনলেই জিভে জল এসে যায়। এটি শুধু একটি খাবার নয়—একটি অনুভূতি, একটি ঐতিহ্য, একটি ইতিহাস। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বগুরার দই বাংলাদেশের মিষ্টান্ন সংস্কৃতির গৌরব বহন করে আসছে। দেশি-বিদেশি অতিথিদের কাছে এটি বাংলাদেশের মিষ্টির পরিচায়ক, যেমন ভারতের রসগোল্লা বা পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশ।
বগুরার দইয়ের ইতিহাস প্রায় দুই শত বছর আগের। বলা হয়, বগুরা অঞ্চলের কারিগররা দুধ ও চিনি ব্যবহার করে এমন এক দই তৈরি করেছিলেন, যা অন্য সব দইয়ের তুলনায় ঘন, মোলায়েম ও সুগন্ধি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি জনপ্রিয়তা পায় এবং “বগুরার দই” নামে পুরো দেশে পরিচিত হয়ে ওঠে। এখন এটি বাংলাদভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্য হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে, যা এর ঐতিহ্যকে আরও মর্যাদায় উজ্জ্বল করেছে।
বগুরার দই তৈরির প্রক্রিয়া নিপুণতা ও ধৈর্যের এক অনন্য উদাহরণ। প্রথমে খাঁটি গরুর দুধকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফুটিয়ে ঘন করা হয়। তারপর তাতে পরিমাণমতো চিনি মেশানো হয় এবং ঠান্ডা হলে দইয়ের ছানা বা বীজ যোগ করা হয়। এই মিশ্রণকে মাটির পাত্রে ঢেলে ঢেকে রাখা হয়, যাতে প্রাকৃতিক তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে সেট হয়ে যায়। মাটির পাত্র দইয়ের জলীয় অংশ শোষণ করে নেয়, ফলে দই হয়ে ওঠে ঘন, টানটান ও মসৃণ।
বগুরার দইয়ের স্বাদে থাকে মোলায়েমতা, প্রাকৃতিক মিষ্টি ঘ্রাণ এবং দুধের ঘন সুধা। এটি না বেশি মিষ্টি, না বেশি টক—ঠিক এমন এক ভারসাম্য, যা প্রতিবার মুখে নিলেই আনন্দে ভরে যায় মন। দইয়ের উপরের দিকে হালকা বাদামি স্তর তৈরি হয়, যা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এবং স্বাদের গভীরতা বাড়ায়।
জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক গুরুত্ববগুরার দই আজ শুধু বগুরার সীমাবদ্ধ পণ্য নয়; এটি দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে পাওয়া যায়। উৎসব, পারিবারিক অনুষ্ঠান, বিবাহ বা ঈদের আপ্যায়ন—সব জায়গায় এর উপস্থিতি দেখা যায়। অনেকে এখন অনলাইনে বগুরার দই অর্ডার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান, এমনকি বিদেশেও।
বগুরার দই উৎপাদনে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান যুক্ত হলেও, বগুরা জেলার করতোয়া নদীর তীরবর্তী পুরোনো দোকানগুলোর দইয়ের সুনাম আজও অমলিন। তাদের তৈরি দই এখনও ঐতিহ্যবাহী স্বাদে অপরিবর্তিত, যা মানুষকে সেই পুরোনো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়।
বগুরার দই শুধু একটি মিষ্টান্ন নয়, এটি বাঙালির গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। প্রতিটি চামচে লুকিয়ে থাকে গ্রামের সরলতা, কারিগরের যত্ন, আর বাংলার মাটির গন্ধ। এই দই যেন আমাদের বলে—যত আধুনিকই হই না কেন, ঐতিহ্যের স্বাদ কখনও পুরোনো হয় না।
তাই বগুরার দই আজও বাংলার মিষ্টির রাজা, যার মিষ্টতা মুখে নয়, হৃদয়ে মিশে থাকে।